পম্পা বিশ্বাস মন্ডল
( সহ অধ্যাপিকা / মধ্যমগ্রাম বি.এড. কলেজ)
ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর আগে এক মেয়েকে প্রশ্ন করলো জল্লাদ, শেষ ইচ্ছে কি? শেষ বার কারো সাথে দেখা করার ইচ্ছে থাকলে বল। মেয়েটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে উত্তর দিল-আমাকে মেরে ফেলার পর আরেকবার বাঁচিয়ে তোলা যাবে কি?
কারণ জানতে চাওয়ায় বললো আমি জানি আমি মৃত্যুর পর আর এই পৃথিবীর কিছু দেখতে পারবোনা। কিন্তু আমি চাই আমি মৃত্যুর পর আরেকবার বাঁচতে।
জল্লাদের প্রশ্ন বেচেঁ কি হবে? তুমি তো বেচেঁ দেখার মত এমন কিছু করোনি। তোমার বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না। তুমি এই পৃথিবীর যোগ্য মানুষ হতে পারো নি, তাই মৃত্যুই তোমার সমাধান। হয়তো মৃত্যুর পর তুমি বেঁচে যাবে।
মেয়েটি কথা শুনে হাসছে। আর বলল আপনি আমাকে দড়িতে ঝুলিয়ে মারবেন। এই মৃত্যু আমার কাছে খুব সহজ। আপনি আমাকে মেরে ফেলার পূর্বেই আমি মরে গিয়েছি। মরে গিয়ে মানুষকে মেরেছি। কথা গুলো বলতে বলতে মেয়েটা হাসছে। সবাই অবাক হয়ে দেখছে।
তুমি হাসছো কেন? একটু পর তোমার মৃত্যু সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করো। মেয়েটি হাসছেই। বিন্দুমাত্র কষ্টের কোনো ছিটে ফোটা তার মাঝে নেই।
জল্লাc কে প্রশ্ন করল আপনি যে ফাঁসি দেন আপনার কি কষ্ট হয়?
হ্যাঁ হয়।
এবার মেয়েটি অনেকটা গম্ভীর হয়ে গেল। হাসি মুখটায় দুঃখের একটা ছাপ দেখা যাচ্ছে।
জানেন আমাকে ফাঁসি দেওয়ার কারণটা?
হুম।
কি জানেন আপনি?
তুমি তোমার সন্তানকে নির্মমভাবে খুন করেছ। টুকরো টুকরো করে দিয়েছো লাশটাকে।
হ্যাঁ আমি আগমনীকে হত্যা করেছি। এই যে আমার গলায় দাগ দেখতে পাচ্ছেন জানেন কেন? কারণ আমাকে প্রতিদিনই এইভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই যে আমার শিরায় কাটা দাগ দেখতে পাচ্ছেন জানেন কেন? কারণ আমাকে প্রতিটা দিন যন্ত্রণাদায়ক মুক্তির সাধটা আগেই উপভোগ করিয়েছে। আপনি আমাকে মেরে ফেলার পর কেন আবার বাঁচতে চেয়েছিলাম জানেন? জন্ম থেকে মরতে মরতে এই পর্যন্ত এসেছি। মা হারা ,বাবা হারা। পরিচয় নেই আমার নিজের। দশটাকে দিয়ে যদি একটা কনডমের সদ্ব্যবহার করত তখন আজকে হয়তো আমাকে পৃথিবীতে এইভাবে আসতে হতো না। বছর ১৩ হওয়ার পর যখন কাজ নেই এক বাসায় ৪০ ঊর্ধ্বে এক ভদ্রলোকের বাসায়। তিনদিন যেতেই আমাকে ভোগ করে নেয়। সেই দিনই মৃত্যুকে বরণ করেছিলাম। তারপরও রোজ রাতে কনডমের প্যাকেট খুলে আমাকে ভোগ করতো। মাঝে মধ্যে কোন সেফটি ছাড়াই আর সকাল হলে একটা জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ ছুড়ে মারতো মুখের ওপর। দু বেলা খাওয়ার জোটানো আর বেঁচে থাকার তাগিদেই শুধু বেঁচেছিলাম। এই সমাজের কত ভালোমানুষের মুখোশগুলো পাল্টে গেল আমার শরীরের কাছে এসে আপনি জানেন না। আমি কখনো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিনি। কখনোই না।ওরা শরীর চায় মৃত মানুষের শরীরে আর কি বা থাকবে। এভাবে বাসা পাল্টে মানুষ পাল্টে শুধু আমার শরীরটা পাল্টায় না।
বছর বিশ k¡Ju¡l পর একটা রাস্তার ছেলে টুকাই আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখায়। করেও নিল। ছেলেটার সাথেও পরিচয় সেভাবেই। কোন একরাতের বিছানায়। বিয়ের চার মাস পর সেও নিখোঁজ। পেটে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার কোন উপায় না পেয়ে তাকে দশ মাস পেটে রাখি। বাচ্চাটা হয়। যখন এক বছর হয় প্রথম মা ডাক শুনি আমি। কিন্তু আমি আমার আগমনীকে আমাকে আমার মত বড় করে তুলতে চাইনি। হ্যাঁ ,তাকে মেরে ফেলি আমি। আর আজকে এইভাবে মরার জন্য আমি নিজেকে বাচিয়ে রেখেছিলাম। আমি পারতা মসেই দিনই নিজেকে মেরে ফেলতে ,কিন্তু আমি চেয়েছিলাম সবাই জানুক সব। জানুক এই সমাজ আমাকে বাঁচতে দেয়নি। তবু এই সমাজ কোন অপরাধ করেনি সমাজের কখনো ফাঁসি হয়না। আমিঅপরাধী। তাই আবার বাঁচতে চাই আমি। এই সমাজের মানুষ গুলোকে কাছ থেকে দেখার জন্য....
ফাঁসির সময় হয়ে গেছে।
জল্লাদ চোখটা মুছে মুখে কালো কাপড়টা মেয়েটার মুখে বেধে দিল....
পরের দিনের সংবাদপত্রের শিরোনাম—
আগমনীর মৃত্যু