ভাগ্যের পরিহাস

ADITI SAHA
B.ED. 1ST SEM

- কই রে বিল্টু.. এঁটো প্লেটগুলো সেই কখন থেকে টেবিলে পড়ে আছে.. কখন সময় হবে আপনার ওগুলো তোলার.. সেই কখন থেকে রেডিওটাকে নিয়ে খুটখাট করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে...

- যাই গো যাই..

হ্যাঁ গো, আমিই বিল্টু। তবে আমার একটা ভালো নাম আছে যদিও.. সেটা পরে বলছি। ওই যে এতোক্ষণ ধরে যে আমায় ডাকছিল, ওনার নাম কেষ্ট দা। আমি ওনারই ভাতের হোটেলে কাজ করি এই বছর খানেক হলো। মানুষটা এমনিতে খুব ভালো, দুপুরে আমায় ভাত খেতে দেয়। শুধু একটু লাল-নীল জল পেটে পড়লেই অন্য মানুষ। কত গালিগালাজ, চেল্লামেল্লি.. রাত শেষ হলেই পরদিন আবার সেই আগের মতো, যেন কিছুই হয়নি। তবে আমার কাছে উনিই ভগবান। সেইদিন যখন আমায় কেউ কাজ দেয়নি ওই কেষ্ট দা-ই আমায় কাজ দিয়েছে, ভাত দিয়েছে। নাহলে বছর এগারোর ছেলেটা কোথায় যেত তার পাগলী মা’টাকে নিয়ে, এই অচেনা শহরে।

ও হ্যাঁ, আমার ভালো নাম বিমল মাঝি, বাড়ি সেই সুন্দরবন। আমি ওখানকার ইস্কুলে পড়তাম, ক্লাস ফোর। বাবা মাছ ধরতো আর মা মউলি বিক্রি করতো। আমরা ভালো ছিলাম।  বাবা সবসময় বলতো “তোরে অনেক লেখাপড়া করতি হবে রে বাপ.. আমার মতো মাছ ধরতি যেতে হবে না.. দু’বেলা পেট ভরে খেতি পারবি রে.. তোরে আমি অনেক লেখাপড়া শেখাবো.. শহরের বাবুটো বানাবো.. তুই আপিস যাবি...”

বাবা একদিন মাছ ধরতে গেছিল কিন্তু আর বাড়ি ফেরেনি। সবাই বলে বাবা নাকি জলে পড়ে গেছিল। কুমির-টুমিরে টেনে নিয়ে গেছে হয়তো। বাবার মরা লাশটাও পাওয়া যায়নি। যদি পাওয়া যেত তাহলে হয়তো কেউ মা’কে কেউ পাগলী বলে ডাকতো না।

প্রথম প্রথম কেউ কেউ “আহারে” বললেও পরে কেউ  আর খোঁজটুকুও নেয়নি। সব আত্মীয়-স্বজন একে একে মুখ ফিরিয়ে নিল। পাশের বাড়ির এক দাদা বলেছিল কলকেতে-তে নাকি কাজের অভাব নেই। কিছু না হোক দু’বেলা দুটো খেতে পাবো সেই আশায় মা’কে নিয়ে ঘর ছাড়লাম। চলে এলাম কলকেতায়।

 

এই পাশের বস্তিতে একটা ঘরে মা-ছেলেতে মিলে থাকি। দুবেলা পেট ভর্তি খাবার আর দিনে পঞ্চাশ টাকার মাইনেতে কোনো রকমে চলে যায় আমাদের। সামনের মাস থেকে সকালে পেপার দেওয়ার কাজ শুরু করবো। ওই কেষ্ট দা-ই কাজটা ঠিক করে দিয়েছে।

পেপার দিয়ে যে টাকাটা পাবো তা দিয়ে মা’কে মনের ডাক্তার দেখাবো। কেষ্ট দা বলেছে “তোর মা’কে ডাক্তার দেখালে তোর মা আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে.. দেখিস..”

এই রে.. কথা বলতে বলতে অনেক দেরি হয়ে গেল। বাসনকটা কখন থেকে পড়ে আছে.. যাই গিয়ে মেজে আসি, নাহলে কেষ্ট দা আবার বকবে।

রেডিও-তে তখন গান বাজছে..

 

“পাপা কেহতে হে বড়া নাম করেগা

বেটা হামারা এসা কাম করেগা...”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top