Bilkish Ara
D.El.Ed. (2nd year) 2022-24
আমি শ্রীমতি আয়েশা ইয়াসমিন। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র হতভাগী মেয়ে। হতভাগী কথাটা বললাম এই কারণেই ছোট বেলা থেকে যেসব ইচ্ছা মনের মধ্যে ডানা মেলে ছিল আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সেই ইচ্ছা গুলো পরিবারের চাপে নষ্ট হতে চলেছে। জীবনে অনেক কিছু করতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোথাও যেন এই চাওয়াটা পরিবারের কাছে একটা মস্ত বড় ভুল। পরিবারের সদস্য দের কাছে একটাই প্রশ্ন, মেয়ে বলে কি তোমাদের কাছে আমার ইচ্ছার কোন দাম থাকবেনা ? তারা অবশ্য এই ইচ্ছা গুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়না। দেয়না! একটাই কারণ হলো তাদের কাছে মেয়ে হল বরের পরিবারে সদস্য হয়ে সারা জীবন তাদের সেবা করে যাওয়া। কিন্তু আমার কাছে মেয়ের অর্থ হলো একটা ছেলে যেমন রোজগার করে বাবা-মাকে দেখা শোনা করে আমার কাছে মেয়ে মানেও ঠিক তাই মেয়ে মানেই শুধু পরের বাড়ি গিয়ে সংসার করে যাওয়া আর পরের সেবা করা না, আমার কাছে মেয়ের অর্থ হলো বাবা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আমৃত্যু পর্যন্ত পাশে থাকা।
আমি একজন মাঝারি মানের ছাত্রী পড়াশোনায় মোটামুটি ছিলাম তা সত্ত্বেও আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মত মনের মধ্যে স্বপ্ন গেঁথেছিলাম ছিলাম চাকরি করার আমি যখন ছোট ছিলাম তখন পরিবারের লোকজনই একদিন বলেছিল যে, তোকে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে তোকে চাকরি করতে হবে। আমার বর্তমান বয়স ২৩। বাড়ির লোকের বক্তব্য হল ২৩ বছর হয়ে যাওয়া মানে বিয়ে করে নিতে হবে যখন আমি বাবা মাকে বোঝায় যে এখনকার যুগে বয়সটা খুব একটা বাধার কারণ না তখন তারা বলে আমাদের সমাজের ওসব চলে না। তাইতো মা কে বিয়ে করতে হবে কিন্তু আমি ছাড়ার পাত্রীনা, আমি হেরে যাওয়ার মানুষ না। তাই নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য অনেক কিছু ই ত্যাগ করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি আর যত দিন না আমি আমার সাফল্য অর্জন করতে পারব ততদিন আমি এই ভাবে লড়াই করে যাব।
আজকে বাবা মায়ের কথা গুলোকে আমার বড়ই অদ্ভুত লাগে। একদিন যারা বলেছিল তোকে চাকরি করে দেখাতে হবে আজ তারা ই কেমন জানি বদলে গেল! সময়ের, সাথে সাথে কথা গুলোকে বড়ই অদ্ভুত লাগে আমি ভাবি এরা সত্যিই আমার কাছের মানুষতো? সত্যিই কি এরা আমার ভালো চায় ? সত্যিই কি …? আজ আমি আমার স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় চলে এসেছে এখন আর হয়তো এক দুই বছর গেলেই আমি আমার স্বপ্ন কে ছুতে পারবো কিন্তু পরিবারের লোক তাদের স্বার্থের কথা ভেবে আমাকে সংসারের গুন্ডির মধ্যে বেঁধে দিতে চাইছে। কিন্তু আমার কাছে বিয়ের থেকে শিক্ষা বড়। তাই বলি ,আমার আপত্তি সত্ত্বেও কেন তোমরা বিয়ে দিতে চাইছ। তখন বাবা বলেন, “আমি তোর ভালো চাই”। তারা কেউ ভবিষ্যতের কথা ভাবছে না যে, পরবর্তী কালে যদি কোন সমস্যা হয় তখন মেয়ে আর উঠে তাড়াতে পারবে না। এটাও ভাবছে না যে, মেয়েদের ও সম্মান আছে। মেয়েদের একটা কর্তব্য আছে বাবা মায়ের প্রতি।
অদ্ভুত এই সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েরা নাকি এই সমাজের কান্ডারি। কিন্তু আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আজ আমার মত শত শত মেয়েরা হয়তো তাদের পরিবারের চাপে তাদের স্বপ্নটাকে মেরে ফেলছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আজও আমাদের সমাজ অনেক পিছিয়ে তবে এইটুকু বলতে পারি এইভাবেই যদি প্রত্যেকটা মেয়ে তাদের ইচ্ছে গুলোকে পূরণ করার জন্য লড়ে যেতে পারে, তাহলেই আমাদের সমাজ একদিন প্রকৃত শিক্ষিত হবে।তবে থেকেই হবে আমাদের সমাজের মেয়েরা স্বাধীন।